গ্যাংগ্রিন বা মাংসের পচন রোগে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা
Gangrene (গ্যাংগ্রিন, মাংসের পচন) :- গ্যাংগ্রিন মানে হলো শরীরের কোন একটি অংশে রক্ত সরবরাহ না থাকার কারণে সেখানকার মাংস পঁচে যাওয়া। ইহা যদিও শরীরের যে-কোন স্থানে দেখা দিতে পারে, তথাপি গ্যাংগ্রিন সবচেয়ে বেশী দেখা দেয় হাতের এবং পায়ের আঙুলে। রক্তনালীর রোগ, বড় ধরণের এক্সিডেন্ট, মাত্রাতিরিক্ত টাইট ব্যান্ডেজ, ডায়াবেটিস প্রভৃতি কারণে গ্যাংগ্রিন হয়ে থাকে। ইদানীং ডায়াবেটিস রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্যাংগ্রিনের রোগীও বৃদ্ধি পেয়েছে। এলোপ্যাথিতে এই রোগের কোন চিকিৎসা নাই বিধায় এবং হোমিও চিকিৎসা সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায়, গ্যাংগ্রিনের রোগীরা সাধারণত অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এলোপ্যাথিক ডাক্তাররা পায়ের আঙুলে গ্যাংগ্রিন হলে প্রথমে আঙুল কেটে ফেলে দেয়, তারপর গ্যাংগ্রিন আরেকটু অগ্রসর হলে পায়ের গোড়ালী পযর্ন্ত কেটে ফেলে, তারপর হাটু পযর্ন্ত কাটে এবং শেষে কোমর পযর্ন্ত কেটে ফেলে।
এভাবে বারবার অপারেশনের ধাক্কায় রোগীরা অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অথচ উপযুক্ত হোমিও চিকিৎসা অবলম্বন করলে অপারেশন ছাড়াই এই রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূল করা যায়। একজন হোমিও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যদি চেষ্টা করেন, তবে মাত্র পাঁচ টাকার ঔষধেই যে-কোন গ্যাংগ্রিনের রোগীকে সারিয়ে দিতে পারেন। অথচ এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় গ্যাংগ্রিন তো সারেই না, তারপরও রোগীরা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে পথের ভিখারীতে পরিণত হয়।
Arsenicum album : গ্যাংগ্রিনে সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত ঔষধ হলো আর্সেনিক। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো ছুরি মারার মতো ভয়ঙ্কর ব্যথা, আক্রান্ত স্থান কালচে রঙ ধারণ করে, ভীষণ জ্বালাপোড়া ভাব, অস্থিরতা, ওজন কমে যাওয়া, ভীষণ দুর্বলতা ইত্যাদি। ব্যথা সাধারণত মধ্যরাতে বৃদ্ধি পায় এবং গরম শেক দিলে কমে যায়। রোগী মৃত্যুর ভয়ে কাতর হয়ে পড়ে। সাধারণত উচ্চ শক্তিতে খাওয়া উচিত এবং বিনা প্রয়োজনে ঘনঘন খাওয়া উচিত নয়।
Lachesis : ল্যাকেসিস গ্যাংগ্রিনের আরেকটি শ্রেষ্ট ঔষধ। সাপের বিষ থেকে তৈরী এই ঔষধটির প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো আক্রান্ত স্থান নীলচে অথবা বেগুনি রঙ ধারণ করে, অল্প একটু কাটা থেকে প্রচুর রক্ত যায়, বেশী ভাগ ক্ষেত্রে রোগ প্রথমে শরীরের বাম পাশে আক্রমণ করে এবং সেখান থেকে ডান পাশে চলে যায়, সাংঘাতিক ব্যথার কারণে আক্রান্ত স্থান স্পর্শই করা যায় না, ঘুমের মধ্যে রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, বেশী বেশী কথা বলে, হিংসুটে স্বভাবের ইত্যাদি ইত্যাদি।
Crotalus Horridus : এটি শরীরের ভিজা অংশের গ্যাংগ্রিনে প্রায়ই কাজে লাগে ; যেমন জিহ্বা, টনসিল ইত্যাদিতে। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো দাঁতের মাড়ি-নাক-পাকস্থলী-ফুসফুস-মুত্রনালী-জরায়ু ইত্যাদি থেকে রক্ত ক্ষরণ, এমনকি পশমের গোড়া থেকেও রক্ত ক্ষরণ হয়, ঘনঘন জন্ডিসে ভোগে, মুখমন্ডল ফোলাফোলা, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, রোগ প্রথমে শরীরের ডান পাশে আক্রমণ করে ইত্যাদি।
Secale cornutum : বৃদ্ধ বয়সের গ্যাংগ্রিনে এটি বেশী ফলপ্রদ। মৌমাছির হুল ফোটানোর মতো ব্যথা এবং গরমে সব সমস্যা বৃদ্ধি পায় আর ঠান্ডা প্রয়োগে আরাম লাগে। চামড়া থাকে কুচঁকানো এবং শুকনো। আক্রান্ত অঙ্গ থাকে ঠান্ডা কিন্তু কাপড়-চোপড় দিয়ে আবৃত করা সহ্য হয় না। ক্ষুধা থাকে খুবই বেশী এবং সামান্য একটি ক্ষত থেকে পাঁচ-সাত দিন পযর্ন্ত রক্ত ঝরতে থাকে।
Carbo vegetabilis : বার্ধক্যজনিত গ্যাংগ্রিন, লালচে-বেগুনি রঙের, আক্রান্ত অঙ্গ বরফের মতো ঠান্ডা। দীর্ঘদিন রোগ ভোগার কারণে দুর্বল-অবসন্ন হওয়া রোগী, পেটে প্রচুর গ্যাস হয়, জীবনীশক্তি ক্ষয় পাওয়া কংকালসার ব্যক্তি, খোলা বাতাসের জন্য পাগল ইত্যাদি ইত্যাদি লক্ষণে কার্বো ভেজ প্রযোজ্য।
Arnica montana : সাধারণত আঘাত পাওয়ার পরে সেই স্থানে গ্যাংগ্রিন দেখা দিলে তাতে আর্নিকা সেবন করা উচিত।
Silicea : সিলিসিয়া ঔষধটি যাদের হাড়ের বৃদ্ধিজনিত সমস্যা আছে অর্থাৎ রিকেটগ্রস্থ লোকদের ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে। এই ঔষধে মেরুদন্ডের সাথে সম্পর্কিত কোন না কোন রোগ লক্ষণ থাকবেই। সিলিশিয়ার রোগীরা হয় শীতকাতর, রিকেটগ্রস্থ, এদের জন্মগত হাড়ের সমস্যা থাকে, মারাত্মক ধরণের বাতের সমস্যা থাকে, অমাবশ্যা-পূর্ণিমায় রোগের মাত্রা বেড়ে যায়, মনের জোর বা আত্মবিশ্বাস কমে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। সিলিশিয়ার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলো শরীর বা মনের জোর কমে যাওয়া, আঙুলের মাথায় শুকনা শুকনা লাগা, আলো অসহ্য লাগা, কোষ্টকাঠিন্য, ঘনঘন মাথা ব্যথা হওয়া, চোখ থেকে পানি পড়া, মুখের স্বাদ নষ্ট হওয়া, মাংস-চর্বি জাতীয় খাবার অপছন্দ করা, আঙুলের মাথা অথবা গলায় আলপিন দিয়ে খোচা দেওয়ার মতো ব্যথা, পাতলা চুল, অপুষ্টি ইত্যাদি। সিলিশিয়ার পুঁজ থাকে পানির মতো পাতলা।
[ ভাল লাগলে পোস্টে অবশ্যই কমেন্ট বা শেয়ার করুন , শেয়ার বা কমেন্ট দিলে আমাদের কোনো লাভ অথবা আমরা কোনো টাকা পয়সা পাই না, কিন্তু উৎসাহ পাই, তাই অবশ্যই শেয়ার করুন । ]
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন