বাধক বেদনা বা রজঃকষ্ট ( Dysmenorrhoea )
বাধক বেদনা বা রজঃকষ্ট ( Dysmenorrhoea ):
ঋতুকালে স্ত্রীজননেন্দ্রিয়ের যান্ত্রিক (Organic) বা ক্রিয়াবিকৃতির ( Functional Disorder) এবং স্নায়ুবিক কারণে যদি অল্প রক্তস্রাবসহ তলপেটে ও কোমরে কষ্টকর ব্যথা থাকে তবে তাকে কষ্টরজ, ঋতুশূল বা সাধারণ কথায় বাধকবেদনা ( Dysmenorrhoea ) বলে। দেহ-রোগতত্বের ( Pathophysiology ) উপর ভিত্তি করে একে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রাথমিক বাধকবেদনা কৈশোরে রজঃচক্র শুরুতেই দেখা দেয় এর সাথে তলপেটের কোনো রোগের সাথে সম্পর্ক থাকে না। এটি অতিরিক্ত প্রোষ্টাগ্লান্ডিন(prostaglandi
প্রকারভেদঃ
রোগীর ধাতু প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে বাধকবেদনাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় যথা-
১. রক্তাধিক্য জনিত (Congestive)
২. সংকোচন জনিত (Spasmodic)
৩. ঝিল্লীযুক্ত (Membranous)
১. রক্তাধিক্য জনিত বাধক (Congestive dysmenorrhoea): এ ধরনের বাধক রক্তপ্রধান ধাতুবিশিষ্ট স্ত্রীলোকদের বেশি হয়। অবিবাহিত এবং বিবাহিত উভয় প্রকার স্ত্রীলোকেরই এ ধরণের বাধক হয়ে থাকে। মহিলাদের তলপেটে এবং পিঠের ব্যথা মাসিকের ৩ থেকে ৪ দিন আগে শুরু হয়ে নিচে বা পায়ের দিকে নেমে যায়। কখনও কখনও, এর সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটফাঁপা আবির্ভাব হতে পারে।
২. সংকোচন জনিত বাধক (Spasmodic dysmenorrhoea): এ ধরনের বাধক স্নায়বীয় ধাতুপ্রকৃতির স্ত্রীলোকদের বেশি দেখা দেয়। এ অবস্থায় স্ত্রীলোকের তলপেটে অসহনীয় প্রচন্ড ব্যথা থাকে যা মাসিকের শুরুতেই দেখা দেয়। এর প্রথম এক বা দুই ঘন্টা জন্য তীব্র ব্যথা থাকে, পরে ১০-১২ ঘন্টা জন্য হাল্কা ব্যথা হয়, যা মাসিক প্রবাহ বৃদ্ধির সাথে কমতে কমতে এক সময় ব্যথা থাকে না। এক্ষেত্রে সাধারণত তলপেটের কোনো অঙ্গের অস্বাভাবিকতা থাকে না, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হালকা প্রদাহ থাকতে পারে।
৩. ঝিল্লীযুক্ত বাধক (Membranous dysmenorrhoea): স্নায়ুশূল জাতীয় বা রক্তাধিক্যজনিত বাধকের সাথে উপস্থিত হতে পারে। এতে ঋতুস্রাবের সাথে জরায়ু হতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পর্দা বা থলির(Sac) মত পদার্থ নির্গত হয়। অপেক্ষাকৃত বড় থলি বা পর্দা গুলি অনেকটা গর্ভপাতে নির্গত পদার্থের মত। এক্ষেত্রে জরায়ুর অন্তত্বক পুরু থাকে।
কারণসমূহঃ
কারণের অধিকাংশই সঙ্গাতেই আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে ঝুঁকি সমূহ আলোচনা করা হলো-
ঝুঁকিসমূহ(Risk factors):
* শ্রোণী বা তলপেটে সংক্রমণ
* যৌন মিলনের রোগ
* জন্ম নিয়ন্ত্রনে জরায়ুতে ব্যবহৃত ডিভাইস
* এন্ড্রোমেট্রিওসিস(Endometriosi
* এন্ড্রোমেট্রাইটিস(endometritis
* লিওমাইওমাস(Leiomyomas)- ৪০ বছর বয়সী মহিলাদের এটি বেশি হয়; এটি লক্ষণহীন (asymptomatic) থাকে। কালো নারীদের জরায়ুতে টিউমার(Fibroid) বেশি দেখা দেয়।
* এডেনোমাইয়োসিস(Adenomyosis)- জরায়ুর অন্তঃত্বক(Endometrium) সাধারণত মধ্যত্বকের(Myometrium) দিকে প্রসারিত হয়। ১৫% নারীদের এডেনোমাইয়োসিস এর সাথে এন্ড্রোমেট্রিওসিস থাকে।
* ডিম্বাশয়ের সিস্ট
* জন্মগত জরায়ুর বা যোনির অস্বাভাবিকতা
* ধূমপান
* অ্যালকোহল সেবন
* পরিবারে বাধক ইতিহাস থাকলে
* স্থূলতা
পরীক্ষাঃ
বাধকবেদনা নির্ণয়ে প্রধানত মাসিক ইতিহাস, শ্রোণী পরীক্ষা(Pelvic) এবং শারীরিক পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও প্রধানত আল্ট্রাসনোগ্রাম, রক্তপরীক্ষা, প্রস্রাব পরীক্ষা এর অন্তর্ভুক্ত।
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ
হোমিওপ্যাথি ওষুধ সবচেয়ে জনপ্রিয় রোগ নিরাময়ের একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র ও সদৃশ উপসর্গের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করা হয়। এটি উপসর্গ ও জটিলতা মুছে ফেলে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য অবস্থায় রোগীর ফিরে যাবার একমাত্র উপায়। সদৃশবিধানের লক্ষ্য শুধু বাধকবেদনা চিকিত্সা নয়, তার অন্তর্নিহিত কারণ এবং স্বতন্ত্র ( Individual ) প্রবণতা মোকাবেলায়ও সহায়তা করে। স্বতন্ত্র ঔষধ নির্বাচন এবং চিকিত্সার জন্য, রোগীকে যোগ্যতাসম্পন্ন ও রেজিস্টার্ড একজন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। বাধকবেদনা চিকিত্সার সহায়ক ঔষধগুলো নিম্নরুপঃ
ম্যাগ ফস, ক্যামোমিলা, কলসিন্থ, ক্যালকেরিয়া কার্ব, নাক্স ভমিকা, জেলসেমিয়াম, হেমামেলিস, বেলাডোনা, একোনাট, ক্যাক্টাস, কলোফাইলাম, সিমিসিফিউগা, ককুলাস ইন্ডিকা, প্লাটিনা, পালসেটিলা, সিকেলি কর, গ্রাফাইটিস, টিউবারকুলিনাম, সেপিয়া, ইগ্নেশিয়া, ক্যালি আয়োড, ল্যাকেসিস, কোনিয়াম, কফিয়া, কস্টিকাম,কলিনসোনিয়া, বোরাক্স, এবং অনস্মোডিয়াম ইত্যাদি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন