স্পারম্যাটোসিল
স্পারম্যাটোসিল হলো একটি সিস্ট বা পানিপূর্ণ থলি যা এপিডিডাইসিসে হয়। সাধারণভাবে স্পারম্যাটোসিলে ব্যথা ও ক্যান্সার হয় না এবং দুধের মতো বা স্বচ্ছ তরলে পূর্ণ থাকতে পারে।
স্পারম্যাটোসিল আয়তনে ছোট, সাধারণত আধা ইঞ্চির কম হয়। তবে কারও কারও অনেক বড় হতে পারে। সিস্টের বেশীরভাগ অংশই পানিতে পূর্ণ থাকে।
স্পারম্যাটোসিল সাধারণ একটি রোগ। প্রতি ১০ জন পুরুষের মধ্যে প্রায় তিনজনের এ রোগ হয়। সাধারণভাবে এটা প্রজননে হস্তক্ষেপ করে না বা এর চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, তবে এটা বড় হতে থাকলে এবং অস্বস্তির কারণ হলে আপনার চিকিৎসক অপারেশনের পরামর্শ দিতে পারে।
উপসর্গ :
সাধারণত স্পারম্যাটোসিল কোন উপসর্গ তৈরি করে না এবং এটা একই মাপে থাকতে পারে। তবে এটা বড় হলে আপনি অণ্ডকোষে নিচের উপসর্গগুলো অনুভব করতে পারেন :
– অণ্ডকোষে অস্বস্তি, অণ্ডকোষে ব্যথা, অণ্ডকোষ ভারি বোধ হওয়া
রোগের লক্ষণ :
স্পারম্যাটোসিলের সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন, অণ্ডকোষ থেকে এপিডিডাইসিসে শুক্রাণু বহনকারী কোন নালী বন্ধ হয়ে গেলে এ রোগ হয়।
ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো :
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্পারম্যাটোসিলের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষের মধ্যে স্পারম্যাটোসিল সবচেয়ে বেশী পরিলক্ষিত হয়।
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন :
যেহেতু স্পারম্যাটোসিল সাধারণভাবে কোন উপসর্গ তৈরি করে না, আপনি এটা আবিষ্কার করতে পারেন নিজে নিজে অণ্ডকোষ পরীক্ষা করার সময়, কিংবা আপনার চিকিৎসক আপনাকে শারীরিক পরীক্ষা করার সময় এটা ধরা পড়তে পারে। আপনি যদি অণ্ডথলিতে কোন ধরনের ফোলা বা পিণ্ড অনুভব করেন, তাহলে সবচেয়ে ভাল হয় দেরী না করে অতিসত্বর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। কারণ ওটা অণ্ডকোষের ক্যান্সার কিনা তা চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখবেন। বিশেষ করে আপনি যদি আপনার অণ্ডথলিতে ব্যথা অনুভব করেন তাহলে দেরী করার প্রশ্নই উঠে না। কিছু রোগ অণ্ডকোষে ব্যথা ঘটাতে পারে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা :
এ ক্ষেত্রে শারীরিক পরীক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদিও স্পারম্যাটোসিলে সাধারণত ব্যথা হয় না। তবে হাত দিয়ে চাপ দিলে আপনি অস্বস্তি বা ব্যথা অনুভব করতে পারেন।
আপনার নিচের দুটি পরীক্ষাও করা হয় :
(১)আলোক পরীক্ষা : এ ক্ষেত্রে আপনার চিকিৎসক আপনার অণ্ডথলিতে আলো ফেলে স্পারম্যাটোসিল দেখতে পারেন।
(২)আল্ট্রাসাউন্ড : আলোক পরীক্ষায় যদি পানিপূর্ণ থলি বা পিণ্ড দেখা যায় তাহলে আপনার চিকিৎসক রোগের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আল্ট্রাসাউন্ড করতে পারেন।
জটিলতা :
স্পারম্যাটোসিল খুব কম ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করে। সাধারণভাবে শুক্রাণু এপিডিডাইসিসের নালীগুলো দিয়ে চলাচল করে। নালী বন্ধ হয়ে গেলে শুক্রাণু মরে যায়। এ ক্ষেত্রে স্পারম্যাটোসিল মুক্ত শুক্রাণু দিয়ে পূর্ণ হতে পারে। যা হোক, একটা নালী বন্ধ হয়ে গেলেও অন্যগুলো খোলা থাকে, যেগুলোর মধ্য দিয়ে শুক্রাণু যাতায়াত করতে পারে। তবে নালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে বন্ধ্যাত্ব ঘটতে পারে।
চিকিৎসা :
বেশীরভাগ স্পারম্যাটোসিলের ক্ষেত্রে চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। যদি আপনি অস্বস্তি বোধ করেন তাহলে আপনার চিকিৎসক আপনাকে কিছু ব্যথানাশক ওষুধ যেমন এ্যাসিটামিনোফেন বা আইবুপ্রফেন দিতে পারেন।
স্পারম্যাটোসিল বড় হলে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সিস্ট কেটে অপসারণ করা হয়। একে বলে স্পারম্যাটোসিলেকটমি।
রোগ প্রতিরোধ :
যদিও স্পারম্যাটোসিল প্রতিরোধ করার কোন উপায় নেই, তবে প্রতি মাসে একবার অণ্ডকোষ পরীক্ষা করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে কোন পিণ্ড ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসা নিতে সুবিধা হয়।
কীভাবে অণ্ডকোষ পরীক্ষা করবেন :
কুসুম গরম পানিতে গোসল করার পর অণ্ডকোষ পরীক্ষা করলে সবচেয়ে ভাল হয়। পানির উষ্ণতা আপনার অণ্ডথলিতে শিথিল করবে। এতে করে অণ্ডকোষে কোন অস্বাভাবিকতা থাকলে ধরা পড়বে।
এরপর নিচের স্তরগুলো অনুসরণ করুন-
আয়নার সামনে দাঁড়ান। অণ্ডথলির ত্বকে কোন ফোলা আছে কি না লক্ষ্য করুন। দু’হাতে প্রতিটা অণ্ডকোষ পরীক্ষা করুন। তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল অণ্ডকোষের নিচে রেখে বুড়ো আঙ্গুল উপরে রাখুন।
বুড়ো আঙ্গুল ও অন্য আঙ্গুলের মধ্যে অণ্ডকোষটা আস্তে আস্তে ঘোরান। যে কোন অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন